নিষিদ্ধ নগরের জীবন


আমার চাচাতো বোন মিথিলাকে কলেজে যাওয়ার জন্য খুজতে যাই মিথিলার রুমে।রুমে যেতেই দেখি মিথিলা তার দুলাভাইয়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত পার করছে।।মিথিলা প্রায় অর্ধ উলঙ্গ  আর দুলাভাই শুধু  শর্ট পেন্ট। তাদের প্রেমলীলা দেখে আমি থমকে যাই। এটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি।আমি মিথিলাকে ভালোবাসি এটা মুটামুটি বাড়ির সবাই জানে। এই কারনে কত যে মাইর খেয়েছি তার কোনো হিসাব নাই।আমাকে বরাবর বলে দিয়েছে মিথিলাকে নিজের বোনের মতো দেখার জন্য।


আমি মিথিলাকে এমন অবস্থায় দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।।


-- ছিহ, ছিহ মিথিলা এইসব কি দেখছি?আর দুলাভাই আপনি কি করে পারলেন এটা করতে?(আমার আওয়াজ সুনে যেন ওদের মাথায় আকাশ ভেংগে পরছে)


-- আসিফ প্লিজ কাউকে বইলো না প্লিজ,,,কাউকে বললে আমাদের মানসম্মান থাকবে না?(দুলাভাই)


ওনি সুমি আপুর স্বামী,,,দেখতে স্মার্ট,, আর অনেক বড় চাকরি করে।সুমি আপু হলো মিথিলার বড় বোন।আপু সকালে তার বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাতে গেছে। সাথে চাচিও গেছে।চাচা নাই মারা গেছে ৩ বছর হয়।আব্বুই দুই পরিবারের প্রধান। আব্বুও চাচা মিলে একইরকমের দুইটা দুতলা বাড়ি করে। সুমি আপুর বিয়ে হয়েছে ২ বছর।একটা ৬ মাসের মেয়ে বাচ্চাও আছে। আপুকে আব্বুই বিয়ে দেয়।।বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়।দুলাভাই আমার হিরেরটুকরা বাড়ির সবাই জানে।।কিন্তু তার চরিত্র যে এত খারাপ আমি নিজেও ভাবতে পারছি না।


আর মিথিলা? মিথিলা এটা কিভাবে করলো?মিথিলার মত ভদ্র মেয়ে ত তিন গ্রাম খুজেও পাওয়া যাবে না।মিথিলার সৌন্দর্য পরিবারের লোকজন ছাড়া বাহিরের কেউ দেখে নাই।হাত মৌজা।পা মৌজা বোরকা পরে পর্দার সাথেই সব সময় চলাচল করে।কিন্তু আজ সেই মিথিলার একি হাল দেখছি??


-- চুপ করেন আপনি?লজ্জা করে না আবার কথা বলেন?আর মিথিলা তুই না পর্দা করিস,,,কোনো পর পুষের সামনে যাস না।এই তর পর্দার আরালে আসল চেহারা?(আমার কথা সুনে মিথিলা কিছু বলছে না নিজেকে ঢেকে কেদে যাচ্ছে)


-- তোর জন্য তো পুরো পর্দানশীন নারীদের সম্মান নষ্ট হলো।কি দরকার ছিল পর্দা করার পতিতা পল্লিতে গেলেই ত পারতি?(এই মিথিলাকে যখন আমি বলতাম মিথিলা আমি তোকে ভালোবাসি।তোর জন্য সব করতে পারবো।তখন মিথিলা আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতো।।আর আব্বুকে বলে আমাকে মাইর খাওয়াতো)


-- আসিফ,,,কাউকে বলিস না প্লিজ?(মিথিলা কান্না করতে করতে)


-- মিথিলা আমি যখন তোকে ভালোবাসি বলতাম,,তুই আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতি আব্বুর কাছে মাইর খাওয়াইতি।আজ তোর আসল রুপ টা দেখুক সবাই।।আর দুলাভাই আপনাকে আর কি বলবো?(


আমি রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম।ওদের কে যতই বলি রুপ দেখিয়ে দিব কিন্তু সুমি আপুর সংসারটার কি হবে? আর একটা ৬ মাসের মেয়েও আছে তাদের।আর মিথিলাতো আমার চাচাতো বোনই। যাকে আমি ভালোবাসি।তাকে সম্মান কি করে নষ্ট করি।)


-- দুলাভাই আপনি এখনো এখানে বসে আছেন?(দুলাভাই মাথা নিচু করে বসে ছিল)


আমার কথা সুনে,,,দুলাভাই রুম থেকে বের হয়ে যায়।,,


-- মিথিলা অন্তত তোর কাছে এটা আশা করি নাই।কাজ টা কিন্তু বেশি ভালো করিস নাই।।(বলে যখন রুম থেকে বের হতে যাবো দরজা আটকানো)


মিথিলা চিল্লাতে শুরু করে দিছে,,


-- আসিফ আমাকে ছেড়ে দে প্লিজ।আমার এত বড় সর্বনাশ করিস না প্লিজ।। আমি তোকে ভাইয়ের মতোই ভাবি।।।আসিফ না প্লিজ,,,(মিথিলার কান্ডে আমি বাকরুদ্ধ।। সেই সুযোগে মিথিলা ভিতর থেকে দরজা আটকিয়ে নিয়েছে!)


আমি কথা বলতে পারছিলাম না।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে হাত,পা সব বেধে রেখেছে কেউ।।


-- আসিফ তুই আমার এত বড় সর্বনাশ করিস না প্লিজ আমি তোর পায়ে পরছি।।।।(মিথিলা তার কাপড় চোপড় ছিরতে লাগলো।প্রায় অনেক অংশ ছেড়ে ফেলছে)


--অনেক কষ্টে মুখ থেকে বের করলাম,,,মিথিলা কি হচ্ছে এইসব?(আমি)


-- কেউ,,বাচাও আসিফ প্লিজ,,,আ,,,,(মিথিলা অনেক জোরে চিল্লাচ্ছে)


আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই দাড়িয়ে আছি,,,।মিথিলার এমন কান্ডে শরিরের শক্তি হারাই ফেলছি।


বাহির থেকে দরজা ধাক্কাতে লাগলো দুলাভাই।আর দরজা খুলার জন্য চিল্লাতে লাগলো।

দুলাভাইয়ের চিল্লানি সুনে আব্বু,আম্মু,ভাইয়া,ভাবি সবাই মনে হয় চলে এসেছে।


জোরে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজা ভেংগে ফেলে সবাই।দরজা খুলতেই মিথিলা আব্বুর পিছনে গিয়ে লুকায়,,,।মিথিলার কাপড় চোপড় ছেড়া দেখে আন্তাজ করে ফেলেছে মিথিলার সাথে খারাপ কিছু হতে যাচ্ছিল।।


 মিথিলা ন্যাকা কান্না করছে,,, মিথিলাকে ভাবি আগলে নেয়।আর সবাই আমার দিকে অগ্নি চুক্ষু দেখাতে লাগলো?


আব্বু আমার সামনে এসেই ঠাস,,,ঠাস কয়েকটা চর বসিয়ে দেয়। ভাইয়া এসেও অনেকটা চর মেরেছে।আমি কিছু বলতে যাবো সেই সুযোগ নাই।সব কিছু এত দ্রুত হচ্ছিল।


-- মিথিলা,,আসিফ তো তোমাকে কলেজে যেতে ডাকতে আসছিল?তোমাকে এত খারাপ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে,কেন?আসিফ কি তোমার সাথে কিছু করেছে?(ভাবি হয়ত বিশ্বাস করতে পারছে না।আমার মত ছেলে এমন একটা কাজ করবে)


-- ভাবি আমি সুয়ে ছিলাম।আসিফ এসে আমাকে একা পেয়ে আগের মতো ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়।আমি বড় আব্বুকে জানাবো বলাতে আসিফ আমাকে বলে আমি নাকি অনেক মাইর খাওয়াইছি।তাই আজ আমার ইজ্জত কেড়ে নিবে।।তার পর আসিফ আমার সর্বনাশ করতে থাকে।আপনারা না আসলে আজ আসিফ আমার কি যে করতো?(মিথালা ভাবিকে জড়িয়ে ধরে নেকা কান্না কাদছে)


মিথিলার কথা অবিশ্বাস করার কোনো কারনই নাই। আগেই বলেছি তিন গ্রাম খুজেও এমন মেয়ে পাওয়া যাবে না।


আব্বু মিথিলার কথা সুনে যেন আরো রেগে গেলেন?


--তুই আমার ছেলে ভাবতেই লজ্জা লাগছে।যে নিজের চাচাতো বোনের সাথে এমন করতে পারে সে অন্য মেয়েদের কি না করবে?তোর এইবাড়িতে কোনো জায়গা নেই।বের হয়ে যা এই বাড়ি থেকে?(আব্বুর কথা সুনে চোখ বেয়ে পানি পরছে।)


-- আব্বু আমি কিছুই করি নাই?(মাথা নিচু করে কান্না করতে করতে বললাম)


-- অই তুই আমাকে আব্বু বলবি না।আজ থেকে আমার একটা ছেলে তুই মরে গেছিস।(আব্বুর মুখে এই কথা সুনার থেকে মরে যেতে পারলেও অনেক সুখের হতো)


-- আম্মু,,আমি কিছু করিনাই,,মিথিলা,,(কথা আটকিয়ে দিয়ে)


-- তুই আমাকে আম্মু বলবি না,,জানিনা কোন পাপে তোকে পেটে ধরেছিলাম।(আম্মু কেদে কেদে)


আম্মুর মুখে কথা সুনে মনে হচ্ছে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।


আর কাকে বলবো যেখানে আমার গর্ভধারিণী মা বিশ্বাস করে না।আমাকে কিছু বলতেও দেয় নাই।।


আমি দুলাভাইয়ের দিকে তাকালাম,,,মুখে পৈচাছিক হাসি।,,আর মিথিলা এখনো ন্যাকা কান্না করছে।।


সুমি আপুও চলে এসেছে।যার আদরে আমার বড় হওয়া।যেই আপুটা আমাকে আপন ভাইয়ের মতো ভালোবাসে। আমাকে এখনো মুখে খাবার তুলে খাইয়ে দেয়।।সেই আপুটা সব কিছু সুনে,, কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে।। আজ আমি আপুর চোখেও খারাপ হয়ে গেলাম।।


মিথিলার রুম থেকে বের হয়ে,,,আমার রুমে গিয়ে কাপড় চোপড়  গোছাচ্ছি কারন এই বাড়িতে আমার জায়গা নেই।আর আমি কোন মুখে থাকবো এখানে যেখানে সবাই আমাকে ধর্ষক বলে জানে।


কাপড় গোছানো শেষ,,রুম থেকে বের হবো এমন সময় ভাবি আমার রুমে আসলো।ভাবিকে দেখে আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলাম।

কারন ভাবি আমার মায়ের মতো আদর করে।আমার টাকা পয়সার অভাব ভাবিই পুরন করে।ভাবি সুমি আপুর মতই আমার একটা বড় আপু।


-- এটা তুমি কি করলা আসিফ,,?আমরা তো মিথিলার সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি ছিলাম আব্বুকে না হয় আমরা বুজিয়ে নিতাম।তার জন্য জোর করে?(ভাবি)


--ভাবি আমাকে মাফ করে দিও আমি পারি নাই সবার সামনে সত্য টা বলতে?(কান্না করছিলাম)


-- কি সত্য বলতে পারো নাই?(ভাবি)


-- ভাবি কথা দেন কথা গুলো কাউকে বলবেন না?(ভাবির কাছে কথা নিয়ে)


-- হুম,, বলো বলবো না কাউকে?(ভাবি)


-- ভাবি,,আমি মিথিলার সাথে এমন কিছুই করি নাই?(কান্না সুরে)


-- তাহলে মিথিলার কাপড় ছেড়া ছিল কেন?(ভাবি)


-- ভাবি আমি মিথিলাকে ডাকতে গিয়ে,, দুলাভাই আর মিথিলাকে পাপ কাজে লিপ্ত থাকতে দেখি।আমি তাদের অপমান করি।ভয় দেখাই বাড়ির সবাইকে বলে দিব।কিন্তু পরে আপুর সংসার,,আর মিথিলার সম্মানের কথা ভেবে থমকে যাই।।আমি রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিলাম দুলাভাই বাহির থেকে দরজা লক করে দেয়।মিথিলা জোরে জোরে কাদতে থাকে আর কাপড় গুলো ছিড়তে থাকে। তার পর ভিতর থেকে লক করে দেয় মিথিলা। বাহির থেকে দুলাভাই দরজা ডাককাচ্ছে আর চিল্লানি সুনে তোমরা এসে আমাকে এই পরিস্থিতে 'দেখলা।।আমি কাকে বলবো এই কথা।কে বিশ্বাস করবে বলো।।(কেদে কেদে রুম থেকে বের হতে যাচ্ছি)


ভাবির চোখেও পানি,,,,ভাবি বিশ্বাস করলেও নিরুপায়।


-- কি বলছো আসিফ,,,তাদের পাপের বোজা তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে?(ভাবি)


-- ভাবি তুমি কাউকে বলো না প্লিজ,,,মিথিলার সম্মান।।আর আপুর সংসার নষ্ট হয়ে যেতে পারে?(আমি)


-- জানি না আসিফ,,,কে মিথ্যা কে সত্য বলছে।মিথিলার,, আর সুমির জামাইর ত এমন কোনো বাজে লক্ষন দেখি নাই।।(ভাবি)


-- ভাবি তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না তাহলে এটা দেখো?(আমি সুযোগে সব কিছু ভিডিও করে রেখেছিলাম)

ভেবেছিলাম কাউকে দেখাবো না,,কিন্তু পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টার চোখে নিজেকে খারাপ বানাতে পারি নাই।।


-- আসিফ এই ভিডিও এখনই আব্বুকে দেখাবো।।(ভাবি মোবাইল নিয়ে যেতে চায়)


-- ভাবি প্লিজ,,,কথা দিয়েছো কাউকে বলবা না।।সবার চোখে খারাপ হলেও তোমার চোখে যেন ভালো হয়ে থাকতে পারি তাই তোমাকে সব বললাম।।(কথা শেষ করতেই।।।।ভাইয়া ভাবিকে বলছে এই ধর্ষকের সাথে কিসের এত কথা)


ভাবির চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।ভাবি আমার হাতে অনেক গুলো টাকা দিয়ে বলে টাকার দরকার পড়লে যেন ভাবিকে জানাই।।।ভাবি চোখ মুছে আমার রুম থেকে বের হয়। কিন্তু আমার চোখের পানি জোরায় না।রুমটার প্রতি মায়া লাগছিল।।আম্মুর পায়ে একবার সালাম করতে মন চাচ্ছিল কিন্তু সেই সাহস আজ আমার নেই।সবাই আমার চলে যাওয়া দেখছে।ভাবি সবার চোখের আরালে বার বার চোখ মুছছে?


১২টার বাসে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে,,,


চলবে,,,


গল্প : অপবাদ 

সূচনা পর্ব

লেখক : আসিফ

Comments

  1. অনুভুতি যন্ত্রণার

    ReplyDelete
  2. অনুভূতির অনুবাদ

    ReplyDelete

Post a Comment