বাস্তবতার নিরম্ম পরিহাস

বর্ষাকাল 
চারদিকে থৈ থৈ পানি। বাড়ী খালের পাড়ে বিধায় বর্ষাকালে খালটাকে নদীর মত মনে হয়। জানালার সামনে বসে আছে ৮০ বছরের বৃদ্ধা হাফেজা বেগম। বর্ষণ যেমন হচ্ছে তেমন ভাবে ঐ বৃদ্ধার চোখ থেকে পানি ঝরছে। গরীব কি না সে জানে না তবে সবেবরাতে রোজা থাকার পর শরীরটা এমনি দূর্বল হয়ে গেছে। তাই না খেয়ে থাকতে পারে না। দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে ফিরে এসেছে। ক্ষুধায় আধামরা। কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তবু কাউকে কিছু বলতে পারছে না। তার কপালে ভাত হয়ত জুটেছে কিন্তু তরকারী নেই। তার অপছন্দের শাক ভাজা ও ডাল। রাগে দুঃখে না খেয়ে চলে এসেছে। এখন আর আগের মত ক্ষুধা তার সহ্য হয় না। কিন্তু এই বৃদ্ধার কথা কে ভাববে। এ কথাটি কষ্ট হলেও নিমর্ম সত্য যে, তাকে না খেয়ে সূর্যকে বেলা গড়তে সহায়তা করতে হয়। জানালার ধারে বসে খালে অথৈ পানির উপর বৃষ্টি পড়া দেখছে আর নিজের চোখের পানি ফেলছে। সে কি করবে ভেবে পায় না। এই বয়সে কোন কাজও করতে পারবে না। ভালো করে চোখে দেখে না। কোন রকমে এ ঘর ও ঘরে যেতে পারে। নাতিনাতনীদের সহযোগিতায় কলের পানি চেপে নেয়। কিন্তু কাজ করা তার কোন উপায় নেই। বউমারা কোন কিছু না বললেও সামনে কয়টা ভাত ধরে পটে কিন্তু তরকারীর বালাই নেই। অনেক সময় কষ্ট করে খেয়ে এসেছে। আজ সে রাগে আর খেতে পারেনি। কিন্তু রাগ করে ত কোন লাভ নেই। তাকে কে দিবে তরকারী । দেইবা কোথা থেকে। অভাবের সংসার কোন রকমে চলে। অবশ্য এমটি চলার কথা নয়। জীবনে হাফেজা বেগম আর কিছু না করুক সাতটি ছেলের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তার অভাব গোছেনি। সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়ে হাফেজা বেগমের । ১০ বছর বয়সে এই বাড়ীতে বউ হয়ে আসে। স্বামীর বয়সও কম ছিল। কোন কাজকরত না। তাই সংসারে শাশুড়ীকে নিয়ে বেশ অভাবের সংসার শুরু হয়েছিল। ভাইরা আলাদা হওয়ায় তার সংসারের তেমন কিছু ছিল না। তিনজন মানুষ থাকলেও একটি থালা ছিল। তখন তার থালাপাতিল চামচ না থাকলেও এত ভাতের অভাব ছিল না। এখন থালা পাতিল আছে কিন্তু ভাত তরকারী নেই। সেই যে ৭০ বছর আগে অভাব শুরু তার শেষ দেখতে পেলো না হাফেজা বেগম। জীবনে একটি কঠিন মোড়ে এসে দাড়িয়েছে। প্রায় কয়েক বছর হয় তার পেটে ভালোমত কোন খাবার পড়ে না। স্বাভাবিক যে খাবার তাই। সাত ছেলের মা হওয়ার কারণে তার খাবার ও টাকার অন্ত থাকার কথা নয়। কিন্তু সাত ছেলে মানুষে মত মানুষ হয়নি। ছেলেরা ব্যবস্থা বানিজ্য করে কিছুদিন ভালো চলছিল কিন্তু ব্যবস্থা মন্দা হওয়া খাওয়ার যোগানই দিতে পারে না। কোন ছেলে যে কর্মহীন তা নয় কিন্তু ছেলেরা মাবাবাকে খাবার দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। হাফেজা বেগমের বেশ হাসি পাচেছ। তার সব ছেলেই যে গরীব তা নয়। কোন কোন ছেলের ঢাকায় বাড়ী আছে কারো আবার গাড়ী আছে। তা নিজের কাজে স্বপ্নের মত মনে হয়। যে সন্তানের মা বাবা না খেয়ে দিন কাটায় সেই ছেলে গাড়ীতে চড়ে ঘুড়ে বেড়ায়। ভাবতেও নিজের কাজে খারাপ লাগে। এত কষ্ট করে সন্তান মানুষ করে অন্যায় করেছে তারা। ছেলেরা মা বাবার কাছেও আসে না। টাকা পয়সা পাঠানো কথা ভাবে না। কখন কালে ভদ্রে পাঠালেও অভাবী সংসারে তা মুহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। 

হঠাৎ হাফেজা বেগম ডাক শুনতে পায় দাদী এই নাও ডিম ভাজা দিয়ে ভাত। তাকিয়ে দেখে ১০ বছরের নাতনী রোজা ভাতের বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। জান দাদী আজ না বড় আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কত মজার মজার খাবার তৈরী করছে। আর মুরগী পোলাও, খাসী, বড় মাছ আরো কত কি? অথচ দেখ তুমি একটা ডিম ভাজি পাও না। 
হাফেজা বেগম বলল ঐ মাগি এত কটর কটর করিস না। 
তোমার ভাত নাও। 
পেটে ক্ষুধা তাই হাফেজা বেগম না করল না। এত বেশী কাতর হয়েছে না করার শক্তও তার নেই। হাতে নিয়ে বলল এক গেলাস পানি নিয়ে আয়। 
রোজা পানি আনতেই হাত ধূয়ে খেতে শুরু করল। জানো দাদী ঐ যে তোমার যে ছেলের ঢাকায় বাড়ী আছে তার মেয়ের বিয়ে। তুমি যাবে না দাদী। 
তোকে ডিম কে দিল। 
জানো দাদী আমার কাছে দশ টা টাকা ছিল। ঐ টাকা দিয়ে দাদা ডিম এনে দিয়েছে । আমি নিজে ডিম ভেজেছি। ভাল করেছি না বল। আমার মা চাচী রা তোমাকে ঠিক মত দেখেই না। দাদাকেও না। তোমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে দাদী না। 
তোমার ছেলেরা উজাইরা (অকর্মা) এক বাবা মাকে ই ঠিক মত ভাত দিতে পারে না। তুমি চিন্তা করো আমি বড় হলে তোমাকে আর দাদাকে ভাল ভাল খাবার খাওয়াব। 
হাফেজা বেগম ওর কথায় হেসে বলে মাগী তুই বড় হতে হতে আমি কবরে যাব। 
না, তুমি যাবে না। তোমার ছেলেরা তোমাদের কষ্ট দিচ্ছে আমরা দিব না। 
এত কথা বলিস না তোর দাদা খেয়েছে। 
হ্যা খেয়েছে অল্প ভাত। শুধু ডাল দিয়ে। আমি আবার একটু আচার দিয়েছি। তাই দিয়ে খেয়েছে। তুমি দাদাকে খুব ভালোবাস তাই না। 
মাগী কি কস। 
না তুমি এখনও দাদার চিন্তা কর তাই বলছি। 
যা আরো এক গেলাস পানি আন। 

হাফেজা বেগম ভাবে এই ছোট্ট একটা মেযে বুড়ো দাদাদাদীর জন্য ভাবে। অথচ ছেলেরা কি খাাচ্ছি না খাচ্ছি একটা বার ফোন করে খবর নেয় না। মোবাইলে যখন তখন কথা বলা যায় অথচ একটি বারের জন্য বড় ছেলে ফোন করে না। অথচ এই ছেলে কে কতই না ভালবাসা দিয়েছে। প্রথম সন্তানে অনুভতি দিয়েছে। তাই ভালবোসা ছিল সবচেয়ে বেশী। ওর বাবা ত ওকে ছাড়া কিছুই বুঝত না। কি হলো বাপছেলের মধ্যে সম্পর্কে টান পড়ল। ওর বাবা বড়ছেলের কথা শুনতেই পারে না। বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করে বউয়ের কথায় উঠেবসে। গরীব শাশুড়ী বলে কখনও আম্মা বলে ডাকে নি। মায়ের কাছে কখন থাকেনি। ছেলে ঢাকায় চাকুরী করে সেখানে থাকে। নাতিনাতনী গুলো মায়ের মত হয়েছে। দাদাদাদীর কোন খবর নেয় না্। শুনেছি নাতনী নাকি বিশ্ববিদ্্যালয়ে বড় পাশ দিয়েছে। আবার চাকুরী করে। কখনও ফোন করে বলেনি দাদী আমি বড় পাশ দিয়েছি। জীবনে এই কষ্ট গুলি কার জন্য করলাম। আর এই বুড়ো বয়সে না খেয়ে কখন মরে পড়ে থাকবো কেউ দেখবে না। তার শরীর টা স্বাস্থ্যহীন শুকনো। সংসারের অভাবের কারণে কখনও পেট ভরে ভাত খায়নি। কখন ভাত থাকলেও তরকারী ভাল না হওয়ায় খেতে পারেনি। 

ন্যাও দাদী পানি ন্যাও। 
ততক্ষণে ৯০ বছরের বৃদ্ধ হালিম সাহেব আসলেন। কি তাহলে নাতনির ডিম ভাজিতে ভাত খাওয়া হলো। 
সাত ছেলে জন্ম দিলেই ভাত পাওযা যায় না বুঝলে। তোমার আমার এমন না খেয়েই একদিন মরতে হবে। জীবনে আমি ভাল খাবার দিতে না পারলেও। এবার জমি জমা বেচে এই শেষ বয়সে তোমাকে ভাল খাবার দিব। 
মরার পরে খাবার দিও। কবে জমি বিক্রি করবে। রাগ করে বললেন হাফেজা বেগম। 
কয়েকটা দিন যেতে দাও তোমার ছেলে হতে আলাদা হব। কোন ছেলেকে ভাত দিতে হবে না। এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের ভাত খেয়ে এত কষ্ট পেতে চাই না। আমার যা আছে তাই দিয়ে দুজনের চলে যাবে। সন্তান হওয়ার আগে যেমন ছিলাম এখন তেমনি দুই জন হয়ে যাবো। 
জোরে করে বলে উঠলেন হাফেজা বেগম কার ভাত খাবে শুনি। ৩০ বছর ধরে ত খাচ্ছো। এখন আবার না কেন? 
তুমি মা তাই বুঝবে না। তুমি ছেলেদের কোন দোষ দেখতে পাও না। আমি বাবা । ছেলেদের দেওয়া অপমান আমার গায়ে লাগে। তুমি মনে কর তোমার ছেলেরা তোমাকে খুশির সাথে ভাত দিচ্ছে ? না তা নয়। আমাদেরকে আপদ মনে করছে। জীবনের ভুল হলো ছেলেমেয়ে জীবনের সবকিছু দিয়ে ভালবাসা। তা না হলে এই বয়সে তোমাকে এত কষ্ট পেতে হয় । খাবার ছেড়ে উঠে আসতে হয়। জানি তোমার সব ছেলের অবস্থা ভাল না । কিন্তু যাদের অবস্থা ভালো তারা কি করছে তোমার জন্য। তোমার কথা একবার ভাবে যে মা বাবা কি খাচ্ছে। কোন খরচ দেয় মাসে মাসে। ওষুধের টাকা দেয় তোমার বড়োলোক ছেলেরা। শোন মরে পড়ে থাকলে এসে মাটি দিয়ে যাবে। কিন্তু কি কারণে মারা গেলে সেটা দেখবে না। 
সেটা ত তোমার কারণে হয় না। তার অপছন্দে বিয়ে করেছে বলে তুমি তাকে মেনে নাওনি। কেন তোমাকে টাকা দিবে। কেন দিবে ভাত। 
হেসে বলল হালিম সাহেব। সেটা না হয় আমাকে না দিল। কিন্তু তুমি কি দোষ করেছো ছেলের কাছে। কেন তোমার খোজ নেয় না। কেন তোমাকে একটা টাকাও দেয় না বল ? 

দেখ তোমার সাথে আমি তর্ক করতে চাই না। আমার ছেলেরা টাকা দিক আর না দিক আমার ছেলে। এটাই শেষ কথা। 
দেখ সাত ছেলের মা হয়ে যখন তুমি ক্ষুধায় কষ্ট পাও। তখন আমার সম্মানে লাগে। এমন ছেলে জন্ম দেওয়ার চেয়ে না দেওয়াই ভাল ছিল। নিঃসন্তান হলেও এত কষ্ট তুমি পেতে না। 

তোমাকে ছেলেদের দোষ ধরতে হবে না। তুমি যাও। 
হেসে হালিম সাহেব। বারান্দায় গেলেন। 

এই হালিম সাহেব। বেশ কড়া মানুষ। জীবনের বেশী ভাগ সময় ব্যবসা করেছেন। জীবনের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান বাংলাদেশ হতে দেখেছেন। জীবনে বেশী কিছু করতে পারেন নি। এদেশ ওদেশ ব্যবসা করে তার সময় শেষ হয়েছে। ছেলেরা অনেক আগেই সংসারের হাল ধরায় তাকে অত চিন্তা করতে হয় নাই। কয়েক বছর হয় ছেলেরা সংসার ঠিক মত চালাতে পারছে না। তাদের প্রায় খাবারের কষ্ট পেতে হয়। তিন বেলা ভাত ছাড়া আর কোন কিছু জোটে না। কিন্তু কিছু দিন হলো সংসারের কথা ভাবছেন। কি করে চলবে সংসার। একান্নবতর্ী পরিবার হিসাবে থাকলেও সংসারের জীর্ন দশায় কেউ আলাদা হতে চায় না। ভারী অদ্ভূত ব্যাপারে। সংসারে সবাই আলাদা হতে যায় কিন্তু তার ছেলেরা যায় না্। কারণ একটা তাদের আয়ের কোন পথ নেই। ছেলেদের অভাবই এখনও জোরা লেগেছে সংসার। কি করবে সে। জীবনে কোনদিন তার স্ত্রীকে সুখ দিতে পারেনি। একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধার খাবার ছেড়ে আসার দৃশ্য যদি কেউ দেখে তার চোখে জল আসবে। তার ছেলে কি জানে বা বুঝে তার মা কত কষ্টে খাবার ছেড়ে চলে এসেছে। আর এ ঘটনা আজকাল প্রায়ই হয়ে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে ভালো খাবার ও বিভিন্ন ধরণের খাবার খেতে পছন্দ করে। কিন্তু ভাতই ঠিক মত কপালে জোটে না আবার অন্যান্য শখের খাবার। আজকে হালিম সাহেবের নিজেকে বড় অপরাধী লাগছে। ভাবছে চরের জমি গুলি বিক্রি করে দিবে। ভালো টাকাই পাওয়া যাবে। জীবনের শেষ কটা দিন বউকে নিয়ে সুখে থাকার চিন্তা করবে। 



দৌড়ে এলো নাতনী শম্পা। দাদী ছোট কাকা ফোন করেছে। তোমার সাথে কথা বলবে। নাতনী হাতে দিলো ফোনটা। 
হ্যালো তুমি কেমন আছো। 
হ্যা বাবা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো। 
এই ত আছি। মা তোমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে না। ঠিক মত বাজার হচ্ছে না। ঠিক মত খেতে পাচ্ছো না। মা আমার টাকা পাঠাতে দেরী হলো। আজকে টাকা পাঠাবো। তুমি কিন্তু কোন চিন্তা কর না 
না বাবা ঠিক আছে। কিন্তু তুই বিয়ে টা কর। 
মা আমি ত বিয়ে করতে পারি। কিন্তু তোমাদের চলবে কেমনে। তোমার ত যোগ্য ছেলে হইনি। লেখাপড়া ঠিক মত করিনি। তাই টাকা ইনকাম করতে পারছি না। যা টাকা রোজগার করি। তাদিয়ে ত হয় না মা 
বাবা তোর বউটা দেখে মরতে চাই। তুই আমার অতি কষ্টের ছেলের। তোর বউটা দেখলে আমার মনটা শান্ত হতো। 
মা তোমাকে আমার বউ দেখাতে পারলে আমিই বেশী খুশী হই। কিন্তু বিয়ে করলে চলবে কেমনে। তোমাদের টাকা দিতে পারব না। আবার তোমাদের যে আমার কাছে নিয়ে আসব তাও পারব না। এমনিও তোমাদের টাকা ঠিক সময় পাঠাতে পারি না। আর বিয়ে করলে তোমরা না খেয়ে থাকবে। আমার বিয়ের চেয়ে তোমরা অনেক বড় মা। বিয়ে হবে চিন্তা কর না। 
শোন আমাদের কথা চিন্তা করিস না। তোর বাবা বলেছে জমি বিক্রি করবে। 
মা আমার দায়িত্ব হলো তোমাদের ভরনপোষন করা। কোনটা আগে বল মা, আগে মায়ের ভাত নাকি ছেলে বউ। সন্তানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার মাবাবা। মা বাবাকে অভুক্ত রেখে সন্তানের কোন শান্তি হয় না মা। তোমার কোন ছেলেই তোমাদের যত্ন ঠিকমত করতে পারছে না। আবার যাদের টাকা আছে তারা মুখ ফিরিয়ে আছে। তাই তুমি বিয়ের কথা বলো না। কয়েকটা দিন সময় দাও। ভালো একটা চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছি। পেলেই বিয়ে করব। 
বাবা আমি এই আছি এই নেই। শরীরটা বেশী ভাল যাচ্ছে না। তার উপর না খেয়ে রোজা থেকে আরো শরীর খারাপ। 
মা আমার বিশ্বাস তুমি আমার বউকে না দেখে অসুস্থ হবে না। আল্লাহ নিশ্চয় আমার বউ না দেখে তোমাকে নিবে না। মা তুমি ক্ষমা করে দিও তোমাদের যথেষ্ট পরিমান টাকা পাঠাতে পারছি না। 
বাবা তুই টাকা না পাঠালে কি হত জানি না। 
মা তোমার অন্যান্য ছেলেরা যা পারছে করছে। তাছাড়া ওরা আগে সংসার চালিয়েছে। এখন হয়ত সমস্যায় পড়েছে। তুমি ভেব না। শুধু দোয়া কর আমি যেন তোমাদের ঠিক মত সেবা করতে পারি। 
দোয়া ত করছি বাবা আল্লাহ আমার দোয়া শুনে না। 
মা তুমি আব্বা ঠিক মত খেও হ্যা্ এখন রাখি। 

সংসারে যা প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক কম টাকা পাঠায়। সংসারে ১০/১২ জন মানুষ ৬/৭ হাজার টাকায় কি হয়। কাদের টাকাটা গুনে মন খারাপ করে পটেকে রেখে দিল। বলেছিল সবে বরাতে একটু বেশী টাকা পাঠাতে। না আরো কম পাঠিয়েছে। সময় মত টাকা পাঠায় না। এ ভাবে কি করবে সে । সংসার কি ভাবে চালাবে। এত বড় সংসার একা তার ঘাড়ে। সে নিজেও কিছু করতে পারছে না। টুকটাক ব্যবসা করে যা পায় তা সংসারে লাগায়। ছাতা হাতে মায়ের ঘরে প্রবেশ করে কাদের। 
মা এই নাও তোমার পান। 
জরদা আনসোস। 
হ্যা মা। জানি জরদা না খেলে তোমার চলবে না। পানের রস না খেলে তোমার ধম আটকে আছে। অনেক সময় তার এই পানের রস এনে দিতে পারি না। 
মা তুমি তোমার নাতনির বিয়েটে যাবে না? 
যাওয়ার জন্য মন চায়। কিন্তু শরীরটা ভাল না। এ শরীর নিয়ে যাওয়া যাবে না। আবার বিয়ে বাড়ীতে শরীর বেশী খারাপ হলে সমস্যা হবে। 
তা ঠিক । কিন্তু তুমি হলে দাদী। তুমি না থাকলে কি চলে। 
না রে বাবা । আর চলা ভালভাবে বিয়ে হোক দোয়া করি। তোর বাবা ত যাবে না। আমি কি করে যাই বল। তোর বাবা বললেও আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। তারপর সামনে রোজা। জানি না রোজা থাকতে পারব কিনা। সেহেরী ভালো না হলে খেতে পারি না। এত না খেয়ে কি রোজা থাকা যাবে বল। মা তুমি চিন্তা করো না রোজার আগে তোমার ছোট ছেলে টাকা পাঠাবে বলেছে ওর চাকুরী নিয়ে কি সমস্যা তাই টাকা সময় মত পাঠাতে পারে না। গামেন্টর্েসের চাকুরী বুঝই ত। 
হ বাবা। কিন্তু করব বল রোজা সামনে আসলে বেশী চিন্তা হয়। ইফতার কি খাবো সেহেরী কি খাব। এই বয়সে কি এতো চিন্তা করা যায়। 
মা তুমি কোন চিন্তা করো। আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি। এত কম টাকায় আমি কুলাইয়ে উঠতে পারছি না। মা। আমি যাই মা। 
ঠিক আছে তুই যা। 



স্যার আসি। আসো। 
কি ব্যাপার গাড়ী ঠিক আছে ত। 
হ্যা স্যার ঠিক করেছি। তবে ২৫ হাজার টাকা বিল হয়েছে। এই নিন। 
কি বলো ২৫ হাজার টাকা। 
স্যার এটা কমই হয়েছে। অন্য গ্যারেজে গেলে ৩৫ হাজার টাকার নিচে পারতেন না। 
একাউন্টে থেকে টাকা নিয়ে। 
স্যার। 
আবার কি হলো। 
স্যার আমার বেতন বাড়াতে হবে। 
কত পাও এখন। 
৯ হাজার টাকা। 
দশ দিলে হবে। 
না স্যার আমাকে ১২ দিতে হবে। 
কেন এত কেন। 
স্যার আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়াও আমার বড় দুইটি ছেলে মেয়ে আছে। 
বড় দুটি ছেলে মেয়ে মানে। 
মানে স্যার আমার বাবামা। তারা বৃদ্ধ হয়েছে। তাদের ভাত ছাড়াও ঘন ঘন খাবার দিতে হয়। তাই দরকার। 
তোর বাবা মাকে খুব ভালোবাসিস। 
না স্যার ভালোবাসি না। এটা আমার দায়িত্ব । দায়িত্ব কখনও ভালবাসা হয় না। এটাকে ভালোবাসা বলে না। সন্তানের কাছে বাবামা লালনপালন তাদের হক। যদি ভালো ভাসতাম তাহলে হত মাথায় তুলে রাখতাম। 
শোন এত দেতে পারবো না। 
সাড়ে ১০ পাবি। 
স্যার আমার জন্য চাচ্ছি না স্যার আমার মাবাবার জন্য। আমার সন্তানকে লালন পালনের চেয়ে মাবাবার মুখে খাবার তুলে দেওয়া আগে জরুরী। এ জন্য একটার বেশী সন্তান নেইনি স্যার। বেশী সন্তান হলে বাবামা কে ঠিক মত খাবার তুলে দিতে পারতাম না। 
দেখ ১১ হাজার টাকা নে। 
স্যার ১২ হাজারের নিচে আমি নেব না। তা না হলে আমি অন্যত্র যাবো। 
আমার সন্তানের চেয়ে আমার বাবামা বড়। আপনার এখানে কাজ করে যদি আমার মাবাবা না খেয়ে থাকে তাহলে সে কাজ আমি করতে চাই না। 
বেকায়দায় পড়ে গেলেন রাবি্ব সাহেব। কি করবে ভেবে পায় না। ১২ হাজার না দিলে সমস্যা হবে। ড্রাইভার থাকবে না । বেশী অসুবিধা হবে তার বউয়ের। গাড়ী ছাড়া কোথাও যেতে পারে না। বাচ্চাটা স্কুলে গাড়ী ছাড়া যাবে কি করে। আচ্ছা ঠিক আছে ১২ই পাব। ঠিক আছে শোন আজ বাসায় যাব বুঝলি। দুপুরের তোর জামাই বাবু আসবে। 
ঠিক আছে স্যার। কয়টায় যাবেন বলেন। 
১ টায় বের হবো। 

রাবি্ব সাহেব রাগই করলেন মনে মনে। বাবা মার দোহাই দিয়ে ৩ হাজার টাকা ভাগিয়ে নিলো বেটা। মাত্র তিন মাস হলো এসেছে। সংসারে তার অনেক খরচ। ব্যবসা যে খুব ভালো যাচ্ছে তাও না । কি করবে বউয়ের হুকুম গাড়ী যেন কোন সমস্যা না হয়। বউকে ভীষন ভয় পায় রাবি্ব সাহেব। প্রেম করে বিয়ে তাও আবার বড়লোকের মেয়ে। মাত্র তিন দিনের প্রেমে মেয়েটা ঘর ছেড়ে চলে এসেছিল। তার সাহস দেখেই আর ফেরাতে পারেনি। তখন রাবি্ব সাহেব কিছু করে না। ডিগ্রী পাশ করে চাকুরীর জন্য ঘুরছে। কোথাও চাকুরী নেই। অবশেষে গারমেন্টেস এ চাকুরী হলো। যে দিন ময়না বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে এলো সেদিন বোকা বনে গিয়েছিল। কি করবে ভেবে পায় না। মেয়েটা কিছু টাকা ও গহনা নিয়ে এসেছে। বাবি্ব ভয় পেল আবার কিছু না হয়। বন্ধুরা সেদিন সাহায্য করেছিল। গুলশান থেকে গুলিস্থানে এসে উঠল। ভ্যাগিস মেয়েটার বয়স ১৮ পেয়েছিল। মাত্র ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। তিতুমির মহিলা কলেজে পড়ে। মেয়েদের কলেজের সামনে বন্ধুরা মিলে অন্য বন্ধুর বোনের সংবাদ পৌছে দিতে গিয়েছিল রাবি্ব। কলেজের সামনে একটি খুব সুন্দরী মেয়ে দাড়িয়ে আছে। হয়ত গাড়ীর অপেক্ষা করছে। 
আমি বললাম দোস্ত মেয়েটাকে হেভী লাগছে। প্রেমে পড়ে গেলাম। 
অন্য বন্ধু বলল যা প্রস্তাব দে কেউ নেই। 
আরেক বন্ধু বলল যদি পারিস তাহলে চাইনিজ খাওয়াবো। বলতে হবে তোমাকে বিয়ে করতে চাই রাজী। 
না পারব না। এত সাহস আমার নেই। 
দোস্ত যা তোর চেহারা খুবই সুন্দর তোকে দেখেই হা হবে মেয়েটা দেখিস। জাস্ট সাহস করে বল পটে যাবে। মনে হয় বড়লোকের মেয়ে। 
যাবো তাহলে। 
আরে যা না। 
ঠিক আছে চাইনিজ কিন্তু খাওয়াতে হবে। আর ও যদি টোপ খেলে তাহলে ত হলো। 
সেদিন সাহস করে ময়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। ময়না ওকে তাকিয়ে দেখল। 
জীবনে একবারই ময়নার সামনে সাহস দেখিয়ে ছিল। বলল আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। 
মেয়েটা মানে ময়না হা করে তাকিয়ে ছিল। কিছু বলতে পারছিল না। 
কি বলবে না। আমাকে বিয়ে করবে কিনা। 
ততক্ষণে ময়নার গাড়ী চলে এসেছে। সামনে দাড়িয়ে গেছে গাড়ী। মেয়েটি বলল হ্যা তোমাকে বিয়ে করব। কাল এসো। এখানে। দেখা হবে। বলেই গাড়ীতে গিয়ে বসল ময়না।
Kaljoyee

পাশে দাড়িয়েছিল বন্ধুরা কাজে এসে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরল। 
দোস্ত শুধু চাইনিজ না মেয়েটিকে পেয়েগেছিস। 
দুর বড়লোকের মেয়ে ঠকানো জন্য আমাকে বলেছে। 
না কাল সকাল নয়টায় তুই আসবি। 
চল এখন চাইনিজ খাওয়াবি। 
সত্যি তার পর দিন এসেছিল ময়না। গাড়ী নামিয়ে দিতেই আমি কাছে আসলাম। 
তাহলে এসেছেন। সত্যি আমাকে বিয়ে করতে চান। 
হ্যা চাই। 
কি করেন আপনি। 
কিছু না। 
তো বিয়ে কি করে হবে। আপনি আমাকে খাওয়াবেন কি? 
সে চিন্তা তোমার করতে হবে না। 
ওকে আমার সমস্যা নেই। 
চল ওখানটায় বসে কথা বলি। আজ আমার কলেজ ছিল না শুধু তোমার সাথে কথা বলার জন্য আমি এসেছি। 
পর পর তিন দিন কথা বলেছিল। তার পর দিন সরাসরি আমার মেসে এসে উপস্থিত। 
রাবি্ব আমি চলে এসেছি। এখন বিয়ের ব্যবস্থা কর। 
বন্ধুরা দেখে অবাক। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। যখন ময়না বেশি পিড়াপিড়ি করতে লাগল তখন বাধ্য হয়ে কাজী অফিসে গেল এবং বিয়ে সম্পন্ন হল। 
মেসের একটি রুমেই তাদের প্রথম সংসার শুরু হয়েছিল। চাকুরী পেল কয়েকদিন পরে। তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ময়নার বাবা মা কখনও খোজ নিতে আসেনি। চিঠি লিখে ছিল যে তাকে যেন না খুজে। বিয়ে করে সে সুখী হবে। বাবা ভারী অভিমান করে আর কখনও দেখতে আসেনি। ময়নাও কখনও যায়নি। তাই রাবি্ব জানে না শশুড়বাড়ী কি। পরে অবশ্য মেয়ে আর ছেলেটা গিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত ময়না কখনও যায়নি। মেয়েটির জেদ বড় বেশী ছিল। 
পরে ওকে বলেছিল। তুমি কেন আমার কাছে চলে এলে মাত্র তিন দিনের পরিচয়ে। তখন ময়না বলল আমার মা ছিল না। বাবাকে বলেছিলাম বিয়ে কর না। বাবা হঠাৎ করে বিয়ে করায় আমি এই সিদ্ধান্ত নেই। যদি বাবা বিয়ে না করত তাহলে তুমি আমাকে কোন দিন পেতে না। 
কিন্তু বিপত্তি হলো রাবি্বর বাবাকে নিয়ে। বড় শখ করে ছেলেকে ঢাকায় পড়তে পাঠিযেছিলে। রাবি্বর বিয়ে মেনে নেয়নি সেই থেকেও রাবি্বর বাড়ী যাওযা হয়নি। অবশ্য কয়েকবার একা গিয়েছিল মাকে দেখতে। কিন্তু ময়না কখনও বাবার বাড়ী কখনও শশুড়বাড়ী যায়নি। বলতে গেলে রাবি্বর সাথে বাড়ীর সম্পর্ক গভীর ছিল না। মার জন্যই মাঝে মধ্যে তাকে যেতে হত। আজ তার মেয়ের বিয়ের দিয়েছে। নানা নানী, দাদাদাদী কেউ আসেনি। এখন তার এটা নিয়ে কিছু মনে হয় না। তবে বাবমা যে কষ্টে আছে সে জানে। অভাবের সংসারে তাদের সহযোগিতা করা দরকার। বাবা আজও তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি বলে তাদের প্রতি সহায় হয়নি আর তার বউ বাবামার কথা শুনতে পারে না্ শাশুড়ী হওযার পরও সে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়নি। তবে তার দায়িত্ব শেষ। নিজেও এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছে এটা মনে করে রাবি্ব সাহেব। বৃদ্ধ হলে বৃদ্ধ বাবামার দায়িত্ব থাকে না। 

স্যার আপনি না বাসায় যাবেন? 
হঠাৎ সে কল্পনার জগত থেকে ফিরে আসে। চল। 


বাসায় প্রচুর খাওয়ার আয়োজন। ময়না বেশী আদরের দুলালী থাকায় ভালো রান্না করতে পারত না। এখনও তেমন ভালো রান্না জানে না। জামাই হওয়ায় একটু রান্নার প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। তবে তার মেয়েটি বেশ রান্না করতে পারে। বাসায় প্রবেশ করে প্রচুর খাবারের গন্ধ নাকে আসল রাবি্বর। 
কি সূচনা তুই রান্না করেছিস না তোর মা। 
না বাবা মাই রান্না করেছে। আমার রান্নার দক্ষতা মাকে দিয়েছি। দেখ বেশ ভালো রান্না হয়েছে। 
তোর মা ত আর আমার জন্য রান্না করেনি। করেছে জামাইয়ের জন্য । জামাই যে কয়দিন থাকবে ভালো রান্না হবে। 
না বাবা এ বার থেকে দেখ মা খুব ভালো রান্না তোমাকে খাওয়াবে। আমি ত আর থাকতে পারব না। 
সেই জন্যই ত বলছি আমার খাওয়ার দিন শেষ। 
কি বললে আমি তোমাকে ভালো রান্না খাওয়াই না। হয়ত রান্না ভালো হয় না কিন্তু ভালো ভালো খাবার ত তোমাকে প্রতিদিন খাওয়াই তা না হলে বুড়ি টা ত আর এত বড়ো হতো না। 
হ্যা খেয়েছি কিন্তু লবন বেশী ঝাল বেশী হওয়ার জন্য যে কত বার খাবার থেকে উঠে গেছি সে কথা মনে আছে। 
মা তুমি থাম। সারাজীবন শুধু ঝগড়া করে গেলে তোমরা। এখন জামাই হয়েছে একটু ঝগড়া কম করো বুঝলে মা। 
বাবা তুমি হাতমুখ ধুয়ে আস । খাবার টেবিলে রেডি। 
জামাই কোথায়। 
তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। 


সনি এসে বলল দাদী চল ভাত খাবে। 
যা মাগী তুই যা আমি ভাত খাবো না। 
কেন খাবে না তুমি। তোমার শরীর খারাপ করবে। কাল ডিম ভাজি করে দিয়েছিল তাই ভাত খেয়েছ। আজ অসুবিধা কি। 
তোর মা যা রাধে তা খাওয়া যায় না। সাত টা বড় বড় ছেলে অথচ আমি ভাত খেতে পারি না। 
দেখ দাদী তুমি অভিমান করো না। কোন লাভ নেই আমার বাবার যদি থাকত তাহলে ত তোমাকে এত কষ্ট করতে হতো না। 
বাবা যা পারে তাই নিয়ে আসে। 
রোজা এসে বলল দাদী এই নাও তোমার ভাত আমি এনেছি। 
এ মাগি তুই ভাত নিয়ে যা। আমার ক্ষুধা নাই। 
দাদী তোমাকে কয়েকদিন পড়ে রোজা থাকতে হবে। এখন না খেলে রোজা থাকতে পারবে না। 
দুই নাতনী মিলে দাদীকে ভাত খাওয়াতে পারল না। আজ পেটে ক্ষুধা থাকলেও মনের কষ্টে খেলো না। 
প্রতিদিনই এ্ হাফেজা বেগম ভাত খেতে পারে না। হয়ত কোন কোন দিন গরুর মাংস দিয়ে ভাত খায়। কিন্তু হয়ত মাসে একদিন হবে বা দুই দিন। ছেলেরা যদি তাকে নিয়মিত টাকা দিত আজ খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় না। সে জানে তার বড় ছেলে বড়লোক। প্রতিদিন সে মাছ মাংস মুরগী দিয়ে খায়। ৫/৬ টার কমে তরকারী থাকে না। আর তার বাবা মা কি খায় তার প্রতি কোন খেয়াল নেই। এই কি ছেলেদের ধর্ম। কি লাভ হলো তার কষ্ট করে মানুষ করে। নিজের পছন্দে বিয়ে করে বাড়ী ছাড়া। কয়েক বছরের কয়েকবার এলেও বেশীক্ষণ থাকেনি। বাবার ভয়ে তাড়াতাড়ি গেছে। কিন্তু মায়ের হাতে কখনও টাকা দেয়নি। কদাচিত টাকা দিলেও তা অনেক কম। হাফেজা বেগম ভেবে পায় না। নিজে না খেয়ে যে ছেলেকে খাইয়েছে। নিজে কষ্ট করে তার জন্য ভালো খাবার দিয়েছে। আজ সেই ছেলে নিজে খায় অথচ বাবামার কথা একটি বারের জন্য মনে করে না। হাফেজা বেগমের চোখে জল আসে। তার এই কষ্ট কবে দূর হবে। কবে সে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে। তার এত কষ্ট আর সহ্য হয না। 
হালিম সাহেব ঘরে ঢূকে কি হলো খাবার খেলে না। 
তোমাকে কিছু বলতে হবে না। তুমি চুপ কর। 
তোমার ত সেই বয়স নেই যে রাগ করে থাকবে। এখন না খেলে শরীর খারাপ করবে। অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যেখানে তোমাকে এক মুঠো ভাত আর তরকারী দিতে পারে না তোমার ছেলেরা। আর অসুস্থ হলে চিকিৎসা করতে পারবে। বল। তার চেয়ে যা পারো খাও। জানি তোমার কষ্ট হয় কি করব বল। এ্ দেখ আমি চোখ বন্ধ করে যতটুকু ভালো লাগে খেয়ে নেই। আল্লাহ যখন আমাদের এত কষ্টের হায়াত রেেেখছে তার ত মর্যাদা আমাদের দিতে হবে। 
দেখ তুমি বেশ কথা বলো না। আমার ভাল লাগছে না 
হালিম সাহেব বুঝতে পারলেন এখন কথা বলে লাভ নেই। নিজে ঘর হতে বাহির হলো। 
হাফেজা বেগম ডিম ভাজি ভাতের দিকে তাকিয়ে রইলেন আর দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। 


রাবি্ব সাহেব টেবিলে আসলেন। কই জামাইকে ডাক। 
হ্যা আংকেল আমি এসেছে গেছি। 
ময়না বেগম বললেন কি ব্যাপার বাবা তুমি তোমার শশুড়কে বাবা বল না কেন? আমাকে না হয় মা নাই বললে তাই বলে বাবাকেও বাবা বলবে না। 
আসলে আমার ভীষন লজ্জা লাগে বলে বলতে পারছি না। কিছু দিন সময় দেন দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে। 
মেয়ে সোমা বলল হ্যা বাবা কয়েকটা দিন সময় দাও। ওর নাকি বাবা বলতে ল্জজা লাগছে। ছোট বেলায় মা মারা গেছে তাই আর কখনও মা ডাকা হয়নি। সেই দুঃখে বাবাকেই তেমন ভাবে বাবা ডাকে না। 
সোলাইমান বলল সত্যি আমি লজ্জিত। 
সিলভী না দুলাভাই লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আপনার যখন ভাললাগবে তখন বলবেন। 
সোহাগ বলল আজ কাল আর এই বাবা মা বলে না। এই সব পুরোনো চিন্তা বাদ দাও ত তোমরা। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। তোমরাও আগাও। আমি আমার শশুড়/শাশুড়ীকে কিন্তু মা বাবা ডাকতে পারব না মা। তা তোমাকে আগেই বলে রাখলাম। নাও এবার খাবারের দিকে তাকাও। দেখ বাড়ীতে জামাই এলে কত রান্না হয়। 
ময়না বেগম বলল কি বলছিস। কেন জামাই না থাকলে টেবিলে কম খাবার থাকে। 
সোহাগ বলল না আজ অনেক আইটেম দেখছি। পুরো টেবিল ভর্তি। ২০ টা আইটেমের কম হবে না। 
সোমা বলল কেন রে তোর কি হিংসা হচ্ছে। 
না আমার হিংসা হবে কেন। শাশুড়ীরা যে ছেলের চেয়ে জামাই কে বেশী ভালবাসে তার প্রমান। 
সিলভী বলল কি বল ভাইয়া তুমি বিয়ে কর তোমার শাশুড়ীও এমন খাবার খাওয়াবে। 
সোহাগ বলল আরে বাবা মা ছেড়ে শাশুড়ীর খাবার। আমি তা চাই না। 
রাবি্ব সাহেব বলল নে খাওয়া শুরু কর। কথাই বলবি না খাবি। তোর মা কি কম আইটেম করে। ৬/৭ আইটেম দিয়ে ত প্রতিদিন খাস। এর চেয়ে কি বেশী লাগে মানুষের। 
সোলাইমান বলল আপনি ঠিকই বলেছেন। এত টেবিল ভর্তি খাবার আগে কখনও দেখিনি। ছোট বেলায় মা মারা গেছে। তাই মায়ের কথা বিশেষ মনে পড়ে না। সৎ মা খারাপ না খাওয়ালেও এত খাবার কখনও কোন অনুষ্ঠানে রান্না করেন না। সত্যি আমি অবাক হচ্ছি। এত আইটেম না করলেও পারতেন। 
সোমা বলল নতুন জামাই বলে কথা। দেখেন দুলাভাই না করবেন না। তাহলে আবার 
আমার বরের ক্ষেত্রে কম করবে। 

সোহাগ হেসে বলল তা ত বটেই। আপনি বেশী বেশী খেলে মা সিলভীর বেলায় বেশী আইটেম করবে। 
রাবি্ব সাহেব বলল এত কথা বলিস না। খা 
সোমা বলল তোমার প্লেট দাও দেখি। 
সোলাইমান বলল এত দিলে কেন। 
সোহাগ বলল দুলাভাই তোমাকে সব আইটেম খেতে হবে। 
আরে এত খাবার খাওয়া অসম্ভব! 
সম্ভব না হইলেও খেতে হবে। তা না হলে মা কষ্ট পাবে। তোমার জন্য সকাল থেকে এত কষ্ট করে রান্না করেছে। 
ময়না বেগম বলল হ্যা বাবা তুমি সবগুলি একটু একটু করে খাবে। জানি না তেমন স্বাদের হয়েছে কিনা। সোমার কাছ হতে রান্না শিখেছি। ওর বাবার কত বকুনি খেয়ে ভাল রান্না করতে পারিনি। এখন যদি জামাইয়ের ভয়ে রান্না ভালো হয়। 
সোলাইমান বলল না মা রান্না ভালো হয়েছে। চিন্তা করবেন না সব খাব তবে অল্প করে। 
ময়না বেগম হেসে বলল তাই কর বাবা। 

সোমা তার বরের যোগ্যতা হিসাবে ভাল একটা চাকুরী এইটা ছিল তার পছন্দ। ছেলে দু লক্ষ টাকা বেতন পায়। বিদেশেী গামেন্টর্ের মারসেন্টডাইজার ম্যানেজার। ভালো পজিশন। সোমা শুধু তার এই টাকা দেখেই পছন্দ করেছে। অবশ্য বাবামা ও এই দিক টাই দেখেছে। জীবনে তেমন অভাব না পেলেও খুব যে বেশী ঐশ্বর্য তাদের ছিল তা না। বাবা খাওয়া পড়া বেশ পছন্দ করতে বলেই তাদের খাবারের অভাব ছিল না। কিন্তু ঢাকায় এখনও পাচতলা বাড়ী নাই। কষ্ট করে একটা গাড়ী বউয়ের চাপে গাড়ী কিনেছে বটে তবে তা চালানো কষ্ট হয়েছে। তারা কিচ্ছিন্ন একটি পরিবার হয়ে গেছে। বাবা মা কেউ তাদের বাবার বাড়ী যায় না। একবার কি দুই তার নানার বাড়ী গিয়েছিল ছোট বেলায় তার পর আর যাওয়া হয়নি। যেখানে মা যায় না সেখানে তারা যাবে কেন। সে নিজেও ভালো একটা চাকুরী করে। তাই তার জীবন নিয়ে আর চিন্তা করে না। ও বলে গাড়ী কিনে দিবে। তাহলে তার চাওয়া পাওয়ার কোন কমতি থাকবে না। তাই সে এখন নিজেকে সুখী মনে করে। তাছাড়া তার স্বামী তাকে ছাড়া কিছু বুঝে না। সত্যি স্বামী হিসাবে তার পছন্দ খারাপ হয়নি। কিন্তু বাবামার ছিন্ন পরিবার হয়ে থাকাটা তার কখনও পছন্দ হয়নি। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল। 







আজ প্রথম রোজা । হাফেজা বেগমও রোজা রেখেছে ৮০ বছর হওয়া সত্ত্বেও। রোজা তার ভীষন প্রিয়। কষ্ট করে হলেও রোজা তার রাখা চাই। এখন বড়দিনের রোজা। ১৪/১৫ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয়। বর্ষাকাল হলেও গরম বেশ পড়েছে। হালিম সাহেব দুর্বল না হলেও বিকালে দিকে হাফেজা বেগম কে বেশ দুর্বল লাগছে। বিছানায় শুয়ে আছে । নড়াচড়া করতে পারছে না। রোজা তাকে ধরে বসেছে। 

ছোট নাতনী এসে বলল দাদী তোমার কি খারাপ লাগছে? 
হ্যা রে ক্ষুধায় আর থাকতে পারছি না। রাতে সেহেরী ভাল করে খেতে পারিনি। 
তাহলে রোজা ভেঙ্গে ফেলো। 
রোজা ভাংলাম তোর মায়েরা কি খেতে দিবে বল? 
তা অবশ্য ঠিক তুমি মুড়ি খাও। সন্ধ্যার সময় ভাত খেয়ো। 
যদি না খেয়েই থাকতে হয় তাহলে রোজাই থাকি। 
নাতনী দাদীর কষ্ট মাখা কথা গুলি বলার দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট মানুষ কিছু বলতে পারল। হ্যা সে ত ঠিকই বলেছে। দাদী যদি রোজা ভাংগে তাহলে তার জন্য কোন খাবার নেই্। ভাত তরকারী নেই। শুধু মুড়ি খেয়ে রোজা ভেংগে কি লাভ। তার মনটা ভীষন খারাপ হলো। এত অভাবের সংসারে যেন কোন মানুষকে না পড়তে হয়। আমি ছোট মানুষ হয়ত না খেয়ে থাকতে পারব। কয়েকটি রোজা না খেযে থাকতে হয়েছে। আজকেও মা তাকে ডাক দেয়নি। কিন্তু সে না খেয়ে রোজা আছে। কিন্তু দাদী ত বুড়ো মানুষ। সে কোন কষ্ট সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে ক্ষুধার কষ্ট। ৮০ বছর বয়সে কি ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করা যায়। সে ভেবেই পায় না। তার ছেলেরা কেমন। টাকা থাকা সত্ত্বেই কোন খোজ নেয় না বাবামার। নাতনীর চোখে পানি এলো। এই বুড়িবুড়া হয়ত একদিন না খেয়ে মরেই যাবে। তখন ছেলেরা এসে কান্না জুড়ে দিবে। তখন তাদের সামান্য প্রয়োজনের খাবার টুকু তাদের দেয় না। ওমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আমার মা চাচিরাও যেন কেমন। দাদাদাদী যা পছন্দ করে তা রান্না করবে না। একটু কষ্ট করে তাদের পছন্দ মত রান্না করলেও একটু ভাত খেতে পারে। হ্যা আল্লাহ তুমি এমন কষ্টের হাত হতে আমার দাদাদাদী কে বাচাও। আর আমাকে যেন এমন ছেলের সন্তানের মা না করো যারা বাবামার প্রতি যত্নবান হয় না। এর চেয়ে আমাকে নিঃসন্তান রেখো তবু সুখে থাকব আমি। দাদীর কষ্টে নিজেকে সামিল করে জালানা দিয়ে নদী রুপি খালে পানির দিকে তাকিয়ে রইল। দেখতে পেল অঝরে বৃষ্টির ফোটা পড়তে লাগল। আর নাতনীর চোখ দিয়ে লবন মাখা পানি পড়তে থাকল। 



হঠাৎ একটি এম্বুলেন্স হালিম সাহেবের বাড়ীর সামনে এসে দাড়ালো। হাফেজা বেগম বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ছাড়া বিকল্প ছিল না। একে রোজা তার উপর অসুস্থ এই বৃদ্ধা বয়সে। তাই জরুরী ভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ছেলেদের কে ফোন করে জানানো হলো যে তার মা বেশ অসুস্থ। এম্বুলেন্স হাসপাতালের গেটে পৌছলো জরুরী বিভাগের ডাক্তাররা হাফেজা বেগম কে দেখলে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে নিলেন। 

হাফেজা বেগমের সেলাইন চলছে। অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে। অতি শীর্ণকায় শরীরটি বিছানার সাথে লেগে আছে। বুঝাই যায়না এখানে একজন মানুষ আছে। ডাক্তার দেখে তার ছেলেকে বেশ বকা দিলেন। এই মানুষটি রোজা থাকার উপযুক্ত নয় আপনারা কেন তাকে রোজা থাকতে দিলেন। আর দিলেনই যখন তাকে ঠিক মত খেতে দিতে হবে। মনে হয় সে সেহেরী খায়নি। এই মেয়ে তুমি বলত সে সেহেরী খেয়েছে। 
ছোট মানুষটি এখনও দাদীর সাথে আছে। ভয়ে ভয়ে বলল আজ আমিও রোজা আছি তাই শেষ রাতে সেহেরী খেতে উঠে দেখী দাদী ভাত নিয়ে বসে আছে। আলু ভতর্া আর ডাল। দাদী এ দেখে আর খেতে বসেনি। উঠে চলে গেছে। তারপর আমি কযেকটা খেজুর ও পানি দিয়েছি। তাই খেয়ে রোজা আছে। 

তাহলে দেখুন। ছেলের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বলল আচ্চা আপনারা একজন বাবা মা যত্ন নিতে পারেন না। সারা দুনিয়া রোজার কারণে ভাল খাবার বেশী করে খায়। আর আপনার মাবাবাকে একটু সেহেরী ভাল খাবার দিতে পারেন না। কেমন ছেলে আপনারা। শোনেন আপনার মার শারিরীক দূর্বলতা। তার প্রচুর ভালো খাবার দরকার। দীর্ঘদিন তিনি খাবার খান নি এবং ভাল খাবার পান নি। তার ফলে তার শারিরীক অবস্থা খাবাপ হয়েছে এবং তারপর এই শীর্ণকায় শরীর হয়েছে। এখানে সাতদিন রাখেন আমরা চিকিৎসা করি তারপর দেখা যাবে। বৃদ্ধা মানুষ ইচ্ছা করলে আমরা প্রচুর সেলাইন দিতে পারি না। আর ওনার খাবারের জন্য একটা তালিকা করে দিচ্ছি সেই অনুযায়ী আপনারা ওনাকে খাওয়াবেন। তার অন্যান্য কোন সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করব। 

তার ঢাকার ছেলেদের ফোন করা হলেও তারা রাত্রি ১২ টা বাজলে আসেনি। বাড়ীতে যে দুই ছেলে থাকে তারাই মাকে দেখছে। এতক্ষণ হালিম সাহেব ছিলেন। বৃদ্ধ হওয়ায় সে আর রাত্রি জাগরণ করতে পারলে না। তাই তাকে বাড়ী পাঠানো হয়েছে। নাতনী রোজা দাদীকে খুব ভালোবাসে তাই দাদীর পিছু ছাড়েনি। দাদীর মাথার পাশে বসে আছে। বার বার বাড়ী যাওযার কথা বললেও সে যায়নি। আর হাফেজা বেগম ঘুমে বিভোর। সে ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখছে তার সেই ছোট বেলার জীবন। যখন বউ হয়ে ছোট্ট বয়সে এসেছিল । তার প্রথম সন্তান হলো। কত যত্ন করে মানুষ করেছে সন্তানদের। বড় সন্তানের প্রতি বাবামায়ের দরদ আলাদা থাকে। বড় সন্তান ভালবাসা ও আদর সবচেয়ে বেশী পায়। অভাবের সংসার ছিল। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানের সামথ্য ছিল না। একবার দুইদিন ধরে ঘরে রান্না নেই। হালিম সাহেব ধার করে কিছু টাকা পেল। এখন কি করবে। ঘরে বৃদ্ধা মা আর সন্তান । আগে সন্তান না আগে মা। নিজেদের জন্য ভাবেই না। হাফেজা বেগম বলল দেখা মা ত না খেয়ে থাকতে পারবে না। আর দুধ নিয়ে আসলে মা না খেয়ে থাকবে। চাল নিয়ে আসলে বাচ্চাটা না খেয়ে থাকবে। একবছর বয়স। তাহলে কি করবে। যদি দুধ কেনো তাহলে আটা হবে না। আর যদি আটা কেন দুধ হবে না। শোন তুমি আমাদের কথা ভেব না। দুই দিন না খেয়ে আছি আর একদিন পারব। কিন্তু বাচ্চাকে না খাইয়ে রাখা যাবে না। আবার বৃদ্ধা শাশুড়ী ক্ষুধা সহ্য করতে পারবে না। এক কাজ কর। আধা কেজি দুধ আর এক কেজি আটা নিয়ে আসো। আর একটু মিসরি। তাহলে দুধের সাথে একটু আটা গুলে দিলে ওর সারাদিন হয়ে যাবে। আর মাকে কয়েকটা রুটি করে দিলে চলে যাবে সারাদিন। এত অভাব থাকতে মার যেমন কোন কষ্ট পেতে দেয়নি তেমনি সন্তানের খাবার নিয়ে কষ্ট পায়নি। কত খাবার যে সন্তানকে খাইয়েছে নিজে না খেয়ে। আর এই বৃদ্ধ বয়সে সেই সন্তান একটা ফোন করে খোজ নেয় না। স্বপ্নের মাঝে একটু নড়ে উঠল হাফেজা বেগম। রোজা দাদীর শিয়রে বসে আছে। তখন সেহরীর সময় হয়ে গেছে। তার ঘুম ধরে না। হয়ত আজকে তার রোজা থাকা হবে না। কারণ সেহরীর কোন ব্যবস্থা নেই। সাথে ফুফু আছে। সে বারটায় এসেছে খেয়ে । তাই তার আর সেহরীর দরকার নেই্। রোজার খুব ইচ্ছে ছিলে রোজা থাকবে। দাদীর যে রোজা গুলি করতে পারবে না। সে রোজা গুলি সে করে দিবে। তার ভাবতেই অবাক লাগে। যে মায়ের সাতটা সন্তান তার না খেয়ে মরতে হয়। হয়ত ঠিক মত চিকিৎসা না পেলে মরে যেতো। ঢাকার ছেলেরা একটাও আসেনি। হয়ত আসবে না। ফোন করে খরব নিয়েই খালাস। এই টা মানুষের জীবন। এই কি মায়েদের প্রতি সন্তানের প্রতিদান। ছোট্ট রোজার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। ততক্ষণের সেহরীর শেষ সময় ঘোষনা করার জন্য মোয়াজ্জিন বলে উঠল আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। আসহাদুআল্লাহ ইলাহা ইল্লালা ।

Comments