অভিমানী বরের পাগলী বউ


আজ আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিক। হয়তো আমার স্বামীর মনে নাই কিন্তু আজকে এই রাতের কথা স্পষ্ট ভাবে আমার সব কিছুই মনে আছে। আমাদের বিয়েতে আমার মা-বাবা রাজি ছিলো না। কিন্তু আমার স্বামীর মা-বাবা মানে আমার শশুর- শাশুরি আমাকে আনার জন্য পাগল হয়ে গেছিলো। পাগল হওয়ারই কথা আমার শশুর বলতেন আমার ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে আর আমি যদি তাকে এনে না দেই তাহলে কেমন বাবা আমি। ছেলে ছোটবেলা কতোই না খেলনার জন্য বায়না করতো তার সব আবদার পূরণ করতাম। আর এখন জানতেছি মেয়েটাই ছেলেটির সুখ আমি বাবা হয়ে কিভাবে সুখ কেড়ে নেই।
আজ সব কথা গুলো চোখের সামনে মেঘের মতো ভেসে যাচ্ছে।
এই গুলো মনে করতে ছিলাম আমি হঠাৎ আমার স্বামীর ডাক..
- কি তুমি কি শুবে না আর কতোক্ষন অপেক্ষা করবো তোমার জন্য...
- না আমি আজ শুবোনা আমার কাজ আছে কিছু
- কি কাজ শুনি...?( ভুরু কুচিয়ে)
- আছে কিছু কাজ যাও তুমি ঘুমাও
- এই চলোনা তোমায় ছেড়ে ঘুম আসবেনা তো আমার।
- বললাম তো আমি শুবোনা একটা কথা কতোবার বলবো হ্যাঁ
- দেখো বিছানা আমি ঠিক করে শুয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো তাড়াতাড়ি এসো কেমন মসারিটা আমি নিজেই টানিয়ে নিচ্ছি...
- ঠিক আছে এখন যাও
...
...
কিছুক্ষণ পর
...
- ১ ঘন্টা কিন্তু হয়ে গেলো এখনো এলে না তুমি
- আর মোবাইলে কি কাজ করছো যে আমার কাছে আসা যাবেনা।
- চ্যাটিং করতেছি ফ্রেন্ডের সাথে
- ঠিক আছে যা খুশি করো
এই বলে আমার স্বামী ঐ দিকে ঘুরে শুয়ে পরলো, আমি বুঝতে পারলাম অনেক রাগ করলো জানিনা আজ রাগ ভাঙ্গাবো কিভাবে..
কিন্তু সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তো এই টুকু রাগ উঠানো দরকার ছিলো তাই না
আস্তে আস্তে আমি উঠে নতুন বউয়ের মতো করে সাজলাম। কারণ আমাদের বিয়েটা এভাবে হয়েছিলো। বিয়ে হওয়ার ৫ মিনিট আগে বুঝতে পারছি আমার আজ বিয়ে। না মেহেদি পরেছিলাম না গায়ে হলুদ হয়ে ছিলো না না বিয়ের সাজ সেজেছিলাম।
তাই আজকে আমার স্বামীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতোক্ষন রাগাইলাম😂
ঘর টাও কিছু মম বাতি দিয়ে ফুল দিয়ে সাজিয়েলাম।
আমার স্বামীর নাম আবির
আবিরের জন্য একটা ঘরি কিনে আনছি তবে অনেক কষ্ট করে। আবিরের থেকে রোজ ১০ টাকা করে নিতাম আর জমা করতাম। সেই টাকা দিয়ে ঘরি কিনে আনছি।
আবিরদের আর্থিক অবস্হা খুবই খারাপ তাই আমার বাবা মা বিয়ে তে রাজি হন নাই। হবেই বা কেনো কার বাবা মা চায় না তার মেয়ে ভালো ঘরে বিয়ে হোক। কিন্তু বাবা মা শুধু তাদের মেয়ের সুখ ধনী গরিব দিয়ে বিচার করলো। আমার মন কি চায় তা একবারও ভাবলো না। আজ একটা বছর চলে গেলো বাবা মা কে দেখিনি তারাও দেখতে আসেনি আমাকে। আমার স্বামীকে তারা এতো টাই ঘৃণাকর করে যে মেনে নিতেই পারছে না। তার সাথে এখন আমাকেও। খুব মন কাঁদে যখন আবির বলে ফোন করে কথা বলো কিন্তু আমার সাথে তো কেউ কথায় বলেনা।
আজ তো আমার এইসব মনে করে কাঁদার কথা না যাই আবিরকে ডাকদেই আর ৫মিনিট পর ১২টা বেজে যাবে।
- আবির, এই আবির
- কি হলো শুনছো না কেনো..??
-আবির, রাগে কন্ঠে যাও কাজ করো..
- এতো রাগ হিহিহি কিন্তু আমি তো দেখতেছি তুমি হাসতেছো আর আমাকে রাগ দেখাচ্ছো
- না মোটেই না আজ আমি সত্যি সত্যি রাগ করছি।
- আচ্ছা আমি মানছি তুমি রাগ করছো একবার চোখটা খোলো তো।
- না আমাকে ঘুমাতে দেও নাহলে আমি কিন্তু অন্য ঘরে চলে যাবো।
- ঠিক আছে যাও তাও উঠো এখন
- না না না
- ১২টা বেজে গেছে আমি আবিরের কানে কানে বললাম happy anniversary
আবির চমকে উঠে বসলো। আর হ্যা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কি হলো কিছু বলবে নাকি ভ্যা করে তাকিয়েই থাকবা।
- না মানে তুমি কি আমার বউ না অন্য কেউ আমার ঘরে ঢুকে গেছে নাতো।
- অন্য কেউ মানে তুমি কি আমাকে চেনোনা আমি তোমার বউ যার সাথে টানা ২টা বছর প্রেম করে বিয়ে করেছো।
- না মানে আসলে তোমাকে এই রূপে কখনো দেখি নাই তো। আমি তো জানতামই না আমার বউটা এতো সুন্দর। আজ তো তোমাকে দেখে চাঁদটাও লজ্জায় মেঘের আড়ালে লুকাবে।
- হিহিহি হইছে আর কিছু বলোনা নাহলে তোমার আবার নতুন করে প্রেমে পরে যাবো
- কিন্তু আমি তো পরে গেছি
- হ্যা আর যাই কিছু বলোনা কেনো আমি কিন্তু একটু রাগ করছি..
- কেনো কেনো আমার লক্ষি বউটা রাগ কেনো।
- তুমি ভুলে গেছিলে তাই না আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিক।সত্যি সত্যি বলবা কিন্তু।
- সত্যি যখন বলতেই বলছো। আবির মাথা নিচু করে হুম ভুলে গেছিলাম।
- হিহিহি জানতাম আমি তুমি ভুলে যাবে। এই নেও তোমার জন্য এই ছোট একটা উপহার।
- এটা কি..?
- খুলে দেখো
- বাহ! এতো সুন্দর
- হুম সুন্দর তো হতেই হবে তোমার জন্য যে আনছি ।
- নাও ঘরিটা তুমি পরিয়ে দাও
- হুম
- কিন্তু আমি যে তোমার জন্য কিছুই আনিনাই।
- আমি কি বলছি আমার জন্য কি আনছো দেও। আমার কিছুই লাগবে না। শুধু তোমার ভালোবাসা ছাড়া। তোমার বুকে রেখো আমাকে তাই হবে।
- পাগলি বউ আমার এই বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে তোমার জন্য কিছু আনবোনা এটা হয়।
- দারাও আমি আসছি।
এই বলে আবির ছোটো একটা গিফটের পেকেট দেয় আমার হাতে।
আমি খুলে দেখি কানের দুল
অনেক অনেক সুন্দর যদিও ছোট ছিলো। কিন্তু দুল জোড়া সোনার ছিলো তাই মন টা খুশি হয়েই কেমন জানি লাগছিলো।
- আবির এটা তো সোনার দুল এতো টাকা কোথায়
পেলে তুমি।
- আরে তুমি চিন্তা করোনা
- না বলো তুমি
- কিছু টাকা আমার নিজেরই জমা করেছিলাম আর কিছু ধার করেছি। কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা আমি সামনের মাসে শোধ করে দিবো।
আমার চোখে জল দেখে
- আমার লক্ষি বউটা কান্না করেলে কিন্তু চোখের কাজল নষ্ট হয়ে যাবে।
- পচা তুমি খুব পচা
- জানি আমি যেমন আছি তোমারই তো( আবির আমাকে জরিয়ে ধরলো)
- আর কান্না নয়
- কাঁদবো তাই কি
- তাহলে কিন্তু এতোক্ষন যে সুন্দর চেহেরার প্রশংসা করেছেলাম। কান্না করলে কিন্তু ভুতনি দের মতো লাগবে।
- যাহ পচা অনেক ভালোবাসি
- জানি আমি
- আর কি জানো
- তুমি শুধু অামার আর কাউকে দিবোনা
- আমিও তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবোনা।
- তার মানে তুমি আমাকে জ্বালানোর জন্য থেকেই যাবে।
- আবির মারবো কিন্তু
- আচ্ছা আমার লক্ষিটি আমার বুকে ঘুমাও

Comments

Post a Comment